আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের নেপথ্যনায়ক রফিকুল ইসলাম

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭ সময়ঃ ৩:৩৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৪০ অপরাহ্ণ

rafik

ভাষা আন্দোলন বাঙালির আত্মপরিচয়ের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৪৮ সালে  গণপরিষদে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা রূপে বাংলাকে গ্রহণ করার প্রথম দাবি জানিয়েছিলেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে শহীদ হন বরকত, রফিক, সফিক, সালাম, জব্বারেরা। ১৯৫৬ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় শাসকশ্রেণী। কালের পরিক্রমায় ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অন্যতম রূপকার মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম। কানাডা প্রবাসী রফিকুল ১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষাশীহদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রফিক তাঁর সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সংগঠন দাঁড় করান এবং অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রচেষ্টা শুরু করেন।

ইউনেস্কোভুক্ত বিভিন্ন দেশের কাছে রফিকুল ইসলামের অনুরোধপত্র ইউনেস্কোর সহযোগিতা ও বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার ফলে বিশ্বের ২৮টি দেশ এ প্রস্তাবের সহ প্রস্তাবক হতে রাজি হয়। পরে ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ ইউনেস্কোর হেনারেল অ্যাসেম্বলিতে ১৮৮ সদস্য দেশের বিনা আপত্তিতে ও স্বত:স্ফূর্ত সমর্থনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। এভাবে ঘটনালো রফিকুল ইসলামের স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশাল উত্তরণ। এ গৌরবময় অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাঁদের সংগঠন একুশে পদক লাভ করে।

রফিকুল ইসলাম ১৯৫৩ সালের ১১ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের উজির দিঘির পাড় রাজবাড়ি কম্পাউন্ড এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন তাঁর পিতার নাম আবদুল গনি, মাতার নাম করিমুননেসা, ১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। উজির দিঘির পাড় হরেকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমিল্লা হাইস্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজে তিনি লেখাপড়া করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশ নেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায় তাঁর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সাফু সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।

কানাডা যাওয়ার আগে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রশিকাতে ৭ বছর চাকরি করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে জীবিকার তাগিদে কানাডা যান। তিনি দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর কানাডার ভ্যাঙ্কুভার জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বাংলার এই কৃতি সন্তান।

প্রতিক্ষণ/এডি/নাজমুল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G